এই ব্লগটি সন্ধান করুন

শনিবার, ১৫ আগস্ট, ২০১৫

স্তন ক্যান্সার

স্তন ক্যান্সার

স্তন ক্যান্সার কি ?
ক্যানসার এমন এক রোগ, যার অন্তর্নিহিত কথা হলো, এ রোগে দেহের কোষগুলো বাড়তে থাকে নিয়ন্ত্রণের বাইরে। কোষগুলো সব অরাজকতা সৃষ্টির নেশায় মেতে ওঠে, যেন সবাই রাজা নিজের রাজত্বে। আর স্তনে যখন এমন কর্ম চলে, মানে ক্যানসারের সূচনা ঘটে, তখন একে আমরা বলি স্তন ক্যানসার। স্তনেরও রয়েছে তিনটি অংশ, গ্রন্থি, নালি ও সংযোজক কলা। কখনো কখনো তাই স্তনকোষগুলো স্বাভাবিক কোষের অনেক গুণ বেশি দ্রুতগতিতে বাড়তে থাকে। বাড়তে থাকা এসব কোষ মিলে বড় একটি পুঞ্জ তৈরি করে তাকে বলি টিউমার। এই টিউমার আবার দুই ধরনের।
১)বিনাইনঃ বেশীরভাগ স্তন টিউমার বিনাইন হয় যা ক্ষতিকর নয়। কিছু বিনাইন টিউমার স্তন ক্যান্সারের ঝুঁকি বাড়ায়।
২)ম্যালিগন্যান্টঃ ম্যালিগন্যান্ট টিউমারের মধ্যে এমন ধরনের ক্যান্সার জীবকোষ থাকে যা চিকিৎসা না করা হলে স্তনের বাইরে ছড়িয়ে পড়ে। এগুলো রক্তপ্রবাহ কিংবা লসিকার মাধ্যমে ছড়াতে পারে। এইসব জীবকোষ নতুন এলাকায় পৌছে নতুন টিউমার সৃষ্টি করতে পারে। এই নতুন টিউমারকে বলা হয় মেটাস্ট্যাটিক টিউমার।
কাদের স্তন ক্যান্সার ঝুঁকি আছে ?
সব নারী স্তন ক্যানসারের জন্য সমান ঝুঁকিপূর্ণ নয়। বয়স বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে এ রোগের ঝুঁকিও বাড়তে থাকে। ২০ বছর বয়সের আগে স্তন ক্যানসারের ঝুঁকি থাকে না বললেই চলে। স্তন ক্যানসার পুরোপুরি প্রতিরোধ করা না গেলেও, এ রোগের ঝুঁকি অনেকটা কমানো যায়। এ জন্য শারীরিক পরিশ্রম, নিয়মিত ব্যায়াম, ওজন স্বাভাবিক রাখা, প্রতিদিন ফলমূল-শাকসবজি খাওয়া, শিশুকে মায়ের দুধ খাওয়ানো প্রভৃতি প্রয়োজন।
প্রাথমিক ভাবে_দ কোন কোন বিষয়ে সচেতনত থাকতে হবে ?
দ্রুত ও সময়ানুগ রোগনির্ণয়ে সফলতাই স্তন ক্যানসার চিকিৎসার মূল চাবিকাঠি। এ জন্য সবার আগে চাই নারীর সচেতনতা। ৩৫ বছর পার হয়ে গেলেই নিজের স্তন সম্পর্কে সচেতন হতে হবে প্রত্যেক নারীকে। নিজেকে নিজে পরীক্ষা করা এবং স্তন ক্যানসারের লক্ষণগুলো সম্পর্কে সম্যক অবহিত থাকা হচ্ছে এই সচেতনতার প্রথম ধাপ। জেনে নেওয়া দরকার স্তন ক্যানসারের ঝুঁকিগুলো সম্পর্কেও। পরিবারে কারও স্তন ক্যানসারের ইতিহাস, অত্যধিক ওজন, মন্দ খাদ্যাভ্যাস, হরমোন ট্যাবলেট সেবনের ইতিহাস, মাসিকের ইতিহাস— এগুলো জানা জরুরি। এর আগে স্তনে কোনো সমস্যা হয়েছিল কি না বা কোনো পরীক্ষা, যেমন—
ম্যামোগ্রাফি করা হয়েছিল কি না। এগুলো গুরুত্বপূর্ণ তথ্য দেয়। এরপর দরকার একটি সার্বিক ক্লিনিক্যাল অ্যাসেসমেন্ট। স্তনে যেকোনো সমস্যা বা সন্দেহজনক পরিবর্তনে প্রথমেই শরণাপন্ন হতে হবে একজন অভিজ্ঞ চিকিৎসকের।
স্তন ক্যান্সারের প্রাথমিক লক্ষন
স্তনে কোনো চাকা বা পিণ্ড দেখা দিলেঃ-
গোসলের সময় মাসে অন্তত একবার হাত দিয়ে স্তন ও বগল পরীক্ষা করার সময় যদি হাতে কোনো চাকা অনুভব করা যায়, যা আগে কখনো ছিল না। এর আগে স্তনে টিউমারের চিকিৎসা হয়েছে—এমন কারও নতুন করে আবার কোথাও চাকা দেখা দিলে। চাকাটি খুব দ্রুত বড় হতে থাকলে। চাকাটি যদি স্তনের চামড়া বা স্তনবৃন্তের সঙ্গে ঘনভাবে সন্নিবেশিত থাকে। দুই স্তনের আকার ও আকৃতিতে অস্বাভাবিক গরমিল দেখা দিলে। পর পর দুটি মাসিকের পরও স্তনের চাকা চাকা ভাব অনুভূত হতে থাকলে। স্তনের সিস্ট ঘন ঘন দেখা দিলে। বারবার ফোঁড়া হতে থাকলে।
স্তনে ব্যথাঃ-
শুধু ব্যথা কোনো দুশ্চিন্তার বিষয় নয়, কিন্তু এর সঙ্গে চাকা, বিকৃতি বা যেকোনো ধরনের অস্বাভাবিকতা অবশ্যই গুরুত্বপূর্ণ। মেনোপজের পর কোনো নারীর এক পাশে অস্বাভাবিক ও স্থায়ী ব্যথা। যে তীব্র ব্যথা সাপোর্টিভ ব্রা বা ব্যথানাশক খেলেও দূর হচ্ছে না। স্তনবৃন্তের অস্বাভাবিকতা
স্তনবৃন্ত থেকে রক্তক্ষরণঃ-
দীর্ঘস্থায়ী অ্যাকজিমা বা ক্ষত। স্তনবৃন্ত ভেতর দিকে ঢুকে যাওয়া, দেবে যাওয়া বা এক পাশে সরে যাওয়া। যেকোনো বয়সে বৃন্ত থেকে নিঃসৃত ক্ষরণ সর্বদা কাপড়ে লেগে থাকা।
স্তন ক্যান্সার হওয়ার কারণসমূহঃ-
আগেই বলে রাখি,স্তন ক্যান্সার হওয়ার কারণগুলি এখনও সম্পূর্ণভাবে বোঝা যায়নি। কিছু মহিলার ক্ষেত্রে দেখা যায় যে তাদের এই রোগ হওয়ার ঝুঁকি অন্যদের তুলনায় বেশী। মহিলাদের বয়স বাড়ার সাথে সাথে স্তনের ক্যান্সার হওয়ার ঝুঁকি বাড়ে। উল্লেখিত কারণ সমূহ নিম্নে উপস্থাপন করলামঃ-
জেনেটিক রিস্ক ফ্যাক্টরঃ-
- স্তন ক্যান্সার হওয়ার একটি কারণ হলো উত্তরাধিকারসূত্রে পাওয়া ক্রটিযুক্ত ‘জিন’।
- যেসব অস্বাভাবিক জিন স্তনের ক্যান্সার হওয়ার সম্ভাবনা বাড়ায়, তাদের মধ্যে আছে ইজঈঅ১ এবং ইজঈঅ২ জিন।
পারিবারিক ইতিহাসঃ-
- একই পরিবারের দুই বা তার বেশি নিকট আত্মীয়ের স্তনের ক্যান্সার। একই পরিবারের সদস্যদের মধ্যে অন্যান্য ক্যান্সার, বিশেষ করে, মলাশয় ও ভ্রম্নণকোষের ক্যান্সার, সেই সাথে স্তনের ক্যান্সার। ৪০ বছরের কম বয়সী একজন নিকট আত্মীয়ের স্তনের ক্যান্সার।
- স্তনের ক্যান্সারের আক্রান্ত এমন একজন আত্মীয় যার দুই স্তনেই এই রোগ হয়েছে।
ব্যক্তিগত ইতিহাসঃ-
যেসব মহিলার এক স্তনে ক্যান্সার হয়েছে তাদের জন্য স্তনে ক্যান্সার হওয়ার ঝুঁকি বেশি।
জাতিঃ-
শ্বেতাঙ্গ মহিলাদের স্তন ক্যান্সার হওয়ার সম্ভাবনা এশিয়ান বা আফ্রিকান মহিলাদের চেয়ে বেশি।
অন্যান্য কারণসমূহ :-
সন্তানহীনতা বা বেশি বয়সে সন্তান হওয়া। খুব অল্প বয়সেই ঋতুস্রাব শুরু হওয়া কিংবা ঋতুবন্ধ বেশি বয়সে হওয়া। হরমোন রিপ্লেসমেন্ট থেরাপী।
শিশুকে বুকের দুধ পান না করানো। অ্যালকোহল ব্যবহার। স্থূলতা, অধিক চর্বি জাতীয় খাবার এবং শারীরিক কর্মহীনতা।
!!!!! ঘরে বসে নিজে নিজের স্তন পরীক্ষা !!!!!
প্রতি মাসে নিজে থেকে মিনিট কয়েকের মধ্যে করে ফেলা স্তন
ক্যান্সার পরিক্ষা আপনার জীবনে বড় পরিবর্তন আনতে পারে। শতকরা ৭০%
ক্ষেত্রেই নিজে নিজে পরীক্ষা করে ব্রেস্ট ক্যান্সার ধরে ফেলা সম্বব।
যারা আগে ধরে ফেলতে পারবেন তাদের শতকরা ৯৮% আরগ্য লাভ করতে
পারেন।
#নিজের_স্তন_নিজে_কখন_পরীক্ষা_করবেন ?
২০ বছর বয়স হতে প্রতি মাসে নির্দিষ্ট সময়ে নিজের স্তন নিজে পরীক্ষা
করতে হবে।
মাসিক শুরুর ৫ থেকে ৭ দিন পর সাধারণত এই পরীক্ষা করতে হবে, যখন স্তন
নরম এবং কম ব্যথা থাকে।
বয়সের কারণে যাদের মাসিক বন্ধ হয়ে যায় অথবা যেসব নারী গর্ভবতী
তারা এটি করবেন প্রতি মাসের একটি নির্দিষ্ট সময়ে।
যারা বাচ্চাকে বুকের দুধ খাওয়াচ্ছেন তারা পরীক্ষাটি করবেন প্রতি
মাসের একটি নির্দিষ্ট সময়ে বাচ্চাকে বুকের দুধ পান করানোর পর।
নিজে নিজের স্তন পরীক্ষা করার পদ্ধতিঃ-
নিজে নিজের স্তন পরীক্ষা করা খুবই সহজ একটি কাজ। আপনি আপনার ঈগোকে জেরে ফেলে,জেনে নিন কিভাবে নিজের স্তন নিজে পরীক্ষা করতে হয়। সাধারণত ৫টি ধাপে এটা করা সম্ভব।
ধাপ ১
আয়নার সামনে কাধ সোজা করে দাঁড়ান, কোমরে হাত রাখুন ও আপনার স্তনের দিকে তাকান এবং লক্ষ করুন।
--> আপনার স্তনের আকার, আকৃতি ও রং।
--> স্তনদ্বয় দৃশ্যত ফোলা স্থান অথবা বিকৃতি ছাড়া একই আকৃতির আছে কিনা।
নিম্নলিখিত পরিবর্তনগুলো লক্ষ করলে অতিসত্ত্বর চিকিৎসকের পরামর্শ নিন.
--> কুঁচকানো, ফোলা চামড়া অথবা চামড়াতে ডিম্পল (অনেকটা কমলা লেবুর খোসার মত)
--> স্তনের কোথাও ক্ষত অথবা লাল স্থান অথবা ফোলা স্থান।
-->স্থান পরিবর্তিত নিপল অথবা কুচঁকানো অথবা ভিতরে ঢুকে যাওয়া নিপল।
ধাপ ২
এবার দুহাত মাথার উপর তুলুন ও পূর্ববর্তী ধাপে বর্ণিত পরিবর্তনগুলো আবারও লক্ষ্য করুন।
ধাপ ৩
এবার আয়নার সামনে দাঁড়িয়ে থাকা অবস্থাতেই লক্ষ করুন আপনার নিপল থেকে (একটি অথবা দুটি থেকেই) কোনো ধরনের তরল জাতীয় কিছু (যেমন পানির মত অথবা হলুদে অথবা রক্ত) বের হচ্ছে কিনা।
ধাপ ৪
এবার শুয়ে পড়–ন এবং আপনার ডান হাত দিয়ে বাম স্তনে চাপ দিন। এক্ষেত্রে আপনার হাতের আঙুলগুলো একসঙ্গে ব্যবহার করুন (হাতের তালু নয়) ধীরে ধীরে চাকতির মত করে হাত ঘুরান ও অনুভব করুন। এভাবে সম্পূর্ণ স্তনকে পরীক্ষা করুন (উপরের কলারবোন থেকে পেটের ওপর পর্যন্ত ও একপাশ থেকে অন্য পাশ পর্যন্ত এবং অবশ্যই একইভাবে বগল পরীক্ষা করুন) একই ভাবে বাম হাত দিয়ে ডান স্তন পরীক্ষা করুন।
ধাপ ৫
এবার আপনি বসে অথবা দাঁড়িয়ে পূর্ববর্তী ধাপে বর্ণিত উপায়ে আবা আপনার স্তনদ্বয় পরীক্ষা করুন। এই ধাপটি গোসল করার সময়ও করতে পারেন, কারণ সে সময় চামড়া ভিজা ও পিচ্ছিল থাকে বলে পরীক্ষা করতে সুবিধা হয়। নিচের ছবি গুলো খেয়াল করুন………
নিয়মিত ব্যায়াম স্তন ক্যান্সারের ঝুঁকি কমায়
প্রতিটি নারীরই স্তন ক্যান্সারের ঝুঁকি রয়েছে। বিশেষ করে মধ্য বয়সী মহিলাদের এই ঝুঁকি আরও অনেক বেশি। ইদানীং অনেক কম বয়সী মেয়েদেরকেও এই মারাত্মকরোগটিতে আক্রান্ত হতে দেখা যায়। অনেকাংশেই নারীদের অনেক ভুলের কারণেও এই মারাত্মক ব্যাধি দেহে বাসা বেঁধে থাকে। এবং নারীদের জীবনযাপনে কিছুটা পরিবর্তনের মাধ্যমে স্তন ক্যান্সারের হাত থেকে মুক্তি পাওয়া সম্ভব। দিনে মাত্র ৩০ মিনিটের শারীরিক ব্যায়াম নারীদের স্তন ক্যান্সারের ঝুঁকি কমিয়ে দেয় অনেকাংশে।
বিজ্ঞানীরা দেখতে পান বয়স ও উচ্চতা অনুযায়ী যেসকল নারীদের ওজন বেশি তাদের স্তন ক্যান্সারে আক্রান্তের সম্ভাবনাঅন্যান্যদের তুলনায় প্রায় ৫০% বেশি। তারা আরও বলেন যেসকল নারীরা সপ্তাহে অন্তত ৩ ঘণ্টা শারীরিক ব্যায়ামকরেন তাদের স্তন ক্যান্সারে আক্রান্তের ঝুঁকি কমে যায় প্রায় ২১%। এর মূল কারণ হচ্ছে যখন শারীরিক ব্যায়াম করা হয় না তখন স্বভাবতই মুটিয়ে যাওয়ার সম্ভাবনা বৃদ্ধি পেয়ে যায়, দেহে জমা হয় ফ্যাট। দেহের এই ফ্যাট কোষ গুলোতে থাকে ইস্ট্রোজেন। যা দেহে টিউমারের কোষ বৃদ্ধিতে সহায়তা করে। নিয়মিত শারীরিক ব্যায়াম দেহে ফ্যাট জমতে বাঁধা প্রদান করে। ফলে ক্যান্সারের ঝুঁকি অনেকাংশে কমে যায়।
অক্সফোর্ড ইউনিভার্সিটির এপিডেমোলজি ইউনিটের গবেষকগণ জানান, দেহে সামান্যতম মেদ থাকার অর্থ স্তন ক্যান্সারের ঝুঁকি বৃদ্ধি। তাই যেকোনো বয়সী নারী এবং যেকোনো ওজনের নারী হোন না কেন নিয়মিত ব্যায়ামের মাধ্যমে দেহে ফ্যাট জমতে দেয়া থেকে বিরত থাকুন নিয়মিত শারীরিক ব্যায়ামের মাধ্যমে।
বিঃদ্রঃ আমার পোষ্ট গুলো যদি আপনার ভাল লাগে তাহলে অবশ্যয় কমেন্ট করে জানাবেন। আপনার যদি লিখতে কষ্ট হয় তাহলে G or N (G=good, N=nice ) লিখে কমেন্ট করবেন। তাহলে আরো ভাল পোষ্ট নিয়ে হাজির হব।---- আমার পোষ্ট গুলো বিভিন্ন ভাবে Net থেকে  সংগ্রহ করা ---
 Dr. Kaji Arifur Rahman - DHMS
 

কোন মন্তব্য নেই:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন